ওরা বিহারের সাত বীর/The Seven Bravehearts of Bihar

আজ আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর। আমরা গর্বিত! আমরা গর্বিত যে আমরা ভারতের মত মহান দেশের স্বাধীন নাগরিক। হ্যাঁ, আমরা গর্বিত ভারতীয়। তবে আমাদের এই ভারতীয়তা একদিনে হাসিল হয় নি। দীর্ঘ বছরের  অনেক কাটা-ছেঁড়া, রক্ত ঝড়া, বুক চেড়া বেদনা, অনেক নির্যাতন ও বলিদানের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা, আমাদের স্বতন্ত্রতা।
      আজ সেইরকম এক বলিদানের কাহিনী বড় মনে পড়ছে।
        তারাও স্বপ্ন দেখেছিল যেমন আমরা দেখি, আশা-আকাঙ্ক্ষা তাদেরও ছিল যেমন আমাদের থাকে। তবু তারা ছিল ভিন্ন। তাদের স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষা, যা কিছু, সবই ছিল নিজ মাতৃভূমিকে নিয়ে। মাতৃভূমি, যা ছিল বিদেশীদের পদতলে, পরাধীনতার বেরিতে আটক। তারা ছিল আদর্শবাদী, উন্নত, সাহসী, সংযমী, দেশপ্রেমী। তারা প্রণমীয়, তারা বরেণ্য।
        এক অভিন্ন অভিনব মহান স্বপ্ন দ্বারা পরিচালিত হতো তারা। সে স্বপ্ন ছিলো বন্দীত্বের গন্ডীসীমা  পাড় করে শুভ্র পায়রার উন্মুক্ত নীল অম্বরে উড়তে পারার।
সে স্বপ্ন ছিলো স্বাধীনতার।
      সময়টা ছিল বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশক। ১৯৪২ এর  ৯  ই আগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিলেন গান্ধীজী। পুরো দেশে তখন আন্দোলনের ঢেউ। উনার 'করো য়া মরো' শ্লোগানে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য অনেক দেশপ্রেমিদের মত তারাও ১১ আগস্ট  বেরিয়ে পড়েছিলো তেরঙ্গা হাতে নিয়ে। লক্ষ্য ছিল তত্কালীন ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল পাটনার পুরানো সচিবালয়ের বিল্ডিং এ তেরঙ্গা স্থাপন। তারা ছিল সাত মহান বিহারী পুত্র, জোশিলা  তরুণ। কচি বয়সেই তারা ছিল  প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারত- মাতাকে শিকল মুক্ত করতে। তাই জীবনের পরোয়া না করেই স্বতস্ফূর্ত ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেইদিন বেলা ২ টো নাগাদ তেরঙ্গা বহনকারী দেবীপদ চৌধরীর নেতৃত্বে বাকি ছয়জন এগিয়ে চলেছিল পুলিশ-প্রশাসন কারোর তোয়াক্কা না করেই। একটা উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত ঐ সময়। তত্কালীন ম্যাজিসট্রেট ডব্লিউ জি অর্চার এর নির্দেশে  গোর্খা মিলিটারি পুলিশকর্মীরা গুলি চালাতে শুরু করলো দেবীপদকে লক্ষ্য করে। দেবীপদর বয়স তখন মাত্র ১৪। নবম শ্রেণীর ছাত্র। সম্মানিত শিক্ষক দেবেন্দ্রনাথ চৌধরীর পুত্র ছিলেন দেবীপদ।
         দেবীপদ জমিতে লুটিয়ে পড়লে, দশম শ্রেণীর পড়ুয়া রামগোবিন্দ সিং তেরঙ্গা নিজের হাতে নিয়ে এগোতে থাকে। পুলিশ তাকেও গুলিবিদ্ধ করে। সেও পড়ে গেলে এবার তেরঙ্গার ভার নিল আরেক দশম শ্রেণীর ছাত্র রামানন্দ সিন্হা। গুলিবিদ্ধ হয়ে সেও পড়ে গেলে, এগিয়ে এলো শিব নারায়ণ সিংহের পুত্র রাজেন্দ্র সিং, যে ছিলো পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। এইভাবে এরপর যথাক্রমে তত্কালীন গয়ার বাসিন্দা জগপতি কুমার, শ্রী মথুরা প্রসাদ ঝা এর ছেলে সতীশ ঝা, ১৫ বছর বয়সী পাটনার বি এন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উমাকান্ত সিং পরপর তেরঙ্গা এগিয়ে নিয়ে যায়। চোখের সামনে সহযোগীদের ভূমিতে ধূলিসাত্ হতে দেখেও তারা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায় নি। তাই তো গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত শরীরেও উমাকান্ত হাল ছাড়েনি, হাতের ঝান্ডা কে জমিতে পড়তে দেয়নি, তাকে তার উপযুক্ত স্থানে, সচিবালয়ের গম্বুজে স্বমহিমায় উত্তোলন করে শহীদ হয়েছিল।      
      সেদিনের এই ঘটনায় পাটনার বাতাস বিষিয়ে উঠেছিল, মরণ কাঁদন হাহাকার করে ফিরছিল। জানা নেই সেদিনের পর সাত শহীদদের শোকাতুর পরিবারগুলোর ঘরে আর কখনও ঠেকুয়া তৈরী হয়েছিল কিনা। তবে এটা নিশ্চিত যে সেই ঘটনার  পাঁচ বছর পরে যখন ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্ট ভারতবাসীর একাগ্র আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হলো, তারা সবাই সমুদ্র কান্নায় ভেসে গিয়েছিল আরো একবার। তবে এই কান্না ছিলো খুশীর, অব্যক্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি প্রাপ্তির, বেদনা মিশ্রিত খুশীর কান্না।
        স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর পাটনার সেই স্থানে একটা স্মৃতি সৌধ, যা ' শহীদ স্মারক '
নামে পরিচিত, নির্মিত হয় সেই সাত বীরের স্মরণে। স্বাধীনতা দিবসে বিহারের প্রথম রাজ্যপাল জয়রাম দৌলত রাই এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দেশের  প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ  ২৪ অক্টোবর ১৯৫৬ তে শহীদ স্মারক আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মোচন করেন ও মানুষের দর্শনের জন্য খুলে দেন।

       

        কলমে: সুস্মিতা দে

English translation:

The 15th of August, this year, is the 75th anniversary of our independence. We are proud! We are proud that we are independent citizens of a great country like India. Yes, we are proud Indians. However, we did not achieve this Indianness in one day.  We won our freedom from the yoke of British colonial rule after many decades of struggles, services & sacrifices of masses & leaders who with smiles on their face walked to the gallows or faced bullets on their chests.
      Today, the story of such a sacrifice comes to mind.
       They also dreamed as we do, they also had hopes and aspirations as we have. Yet they were different. They were idealistic, advanced, brave, and patriotic. Their dreams, hopes, aspirations, etc were all about their motherland. That land, which was under the feet of foreigners, was trapped in the berry of subjugation.
      They were driven by a single goal. The goal was to cross the boundaries of captivity and fly on the open blue amber of white pigeons. The goal of freedom.
      The time was the forties of the twentieth century. On August 9, 1942, Gandhiji called for Quit India Movement. There was a wave of movement in the whole country then. Inspired by his slogan 'Do or Die', like many other patriots, they came out on August 11 with Tiranga in their hands. The aim was to set up a Tiranga in the old Secretariat building in Patna, the center of power at the time. They were seven young bravehearts great Bihari sons. At a young age, they were committed to freeing the chains of Mother India. So they jumped spontaneously without caring about life, without a second thought.
      At around 2 pm on that day, the other six, led by Devipada Chowdhury, carrying Tiranga, were advancing without the attention of the police-administration. That was an exciting moment at that time. At the behest of the then Magistrate WG Archer, the Gorkha military police started firing at Devipada. Devipada was then only a 14 years old, ninth grade student. Devipada was the son of respected teacher Debendranath Chaudhary.
       When Devipada fell to the ground, Ramgobind Singh, a 10th class student, started walking(proceeding) with the Tiranga in his hands.  Police also shot him. When he also fell, this time another tenth class student Ramananda Sinha took charge of Tiranga. When he too was shot and fell, Rajendra Singh, son of Shiv Narayan Singh, a class XI student of Patna University, came forward. Thus, Jagpati Kumar, then a resident of Gaya, Satish Jha, son of Shri Mathura Prasad Jha, and Umakanta Singh, a 15-year-old second year student of BN College, Patna, took Tiranga forward one after the other. They did not miss the target even though they saw their allies dusting in front of their eyes. That is why Umakanta did not give up even in the bloody body of the bullet, did not allow the flag to fall on the ground, he was martyred by hoisting it in its proper place, in the dome of the Secretariat.
This incident poisoned the air of Patna, the crowd became agitated, thousands of students came out to join the movement. We do not know whether sweets were ever made in the homes of the bereaved families of the seven martyrs after this incident. But it is certain that five years after that incident, when on August 15, 1947, the dream of the people of India was fulfilled, they all once again drowned in the sea of ​​tears. But this cry was a cry of happiness, of liberation from unspeakable pain, of joy mixed with pain.
        After independence, there, that place in Patna, a memorial was built in the memory of those seven martyrs which is known as 'Shaheed Smarak'. Jayaram Daulat Rai, the first Governor of Bihar, laid the foundation stone on Independence Day. The first President of the country, Dr. Rajendra Prasad, officially unveiled the Martyrs' Memorial on 24 October 1956 and opened it to the public.

    Susmita Dey